শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ, ১৪৩১
মোহাম্মদ এমরান।।
জীবনের শুরু থেকেই বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলাম। পরবর্তীতে রসায়ন শাস্রে লেখাপড়া করেও ইসলামি অর্থনীতিকে বেগবান করতেই ইসলামি বীমাকে ভালবেসে জীবনের একমাত্র পেশা হিসাবে বীমা শিল্পে কাজ করে আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক কিছুই অর্জন করেছি! কিন্তু এ শিল্পকে যখন কিছু দেয়ার সময়, তখনই পদে পদে হোঁচট খাচ্ছি! সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে (IDRA) বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষর কার্যকরী হস্তক্ষেপ/পদক্ষেপ কামনা করছি! কি অপরাধ আমাদের আমরা যারা বীমা পেশাকে ভালোবেসেছি?
বীমা কোম্পানীর কতিপয় মালিকরা দেশের কোমলমতি ফুলেল প্রাণ যুব সমাজকে রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে মাঠে নামিয়ে ইচ্ছে মতো ব্যবসা করে তারপর তাদের পথে বসিয়ে ফাইভ স্টার হোটেলে গিয়ে মৌজ করেন! আর এদিকে হাটে-ঘাটে-মাঠে, দিনে-রাতে, ভিজে-শুকিয়ে, রোদে-বৃষ্টিতে আপনাদের হাজার হাজার কোটি টাকার মূলধন গড়ে দেয় আর আপনারা তার দেখভালটুকুও ঠিকমতো করতে পারেন না! অথচ বড় বড় কথা বলেন! লজ্জিত আমি।
পাশাপাশি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে ধর্মের দোহাই দিয়ে কতিপয় অর্থলোভী আলেমদের মাধ্যমে শরীয়াহ্ কাউন্সিলের নামে ধর্মের বেড়াজালে সাধারণ জনগনকে আটকিয়ে তাদের চোখে ধুলো দিতে কোমলপ্রাণ যুব সমাজকে ব্যবহার করেন! যেই শরিয়াহ্ কাউন্সিল আপনাদের তাবেদার হয়ে কাজ করে।
আজ নিজের উপর ঘৃণা হয় এই ভেবে যে যাদের অধিঃনস্থ হয়ে কাজ করেছি তাদের নীতি নৈতিকতা আদর্শ ডাস্টবিনের পঁচা দুর্গন্ধময় ময়লার চেয়েও নিকৃষ্ট। তাদের অধীনেই কিনা জীবনের মহামূল্যবান ২২ টি বছর কাজ করেছি! আল্লাহ্ যদি মাফ না করেন, এ পাপের ক্ষমা নেই।
# আপনারা সব পারেন অথচ অদ্যবধি-
০১. গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলেন না! যথাসময়ে তাদের আমানাত তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতেও আপনারা ব্যর্থ।
০২. চাকরির নীতিমালা ০৮ ঘন্টা কাজ করা, কিন্তু বীমা পেশায় যারা কাজ করেন, তারা বলতে গেলে ২৪ ঘন্টাই কাজের ভিতরে থাকেন, অথচ তাদের চাকরির স্থায়ী কার্যকরি নীতিমালা করতে পারলেন না! মালিক আর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যার যখন যেমন খুশি তেমন করে খেলে যাচ্ছে আমাদের নিয়ে।
০৩. কোম্পানি পরিবর্তনের নেই কোন কার্যকরী নীতিমালা! যে যার মতোই যাচ্ছেন আসছেন! কেউ ২০/২২ বছর চাকরি করে তলানিতে পড়ে থাকে! আবার কেউ ১০ বছরে ১০ কোম্পানি খেয়ে এমডি বনে যান, দূঃর্ভাগ্য আপনারা আবার তার অনুমোদন দেন!
০৪. প্রায় কোম্পানীতে এম.কম কমিটির নামে কর্মকর্তাদের রক্তচোষা কমিটি বিরাজমান। যেই কমিটির লোকেরা বছর বছর পদোন্নতি/ইনক্রিমেন্ট পেলেও মাঠে ঘাটে যারা ঘাম ঝড়িয়ে প্রিমিয়াম আয় করেন নানান শর্তের বেড়াজালে আটকিয়ে নিত্য নতুন আইন করে অযোগ্য বিবেচনায় তাদের ফেলে রাখেন বছরের পর বছর এমনকি যুগও পেড়িয়ে যায়!
০৫. মালিক পক্ষের সাথে আপনাদের বেশ সখ্যতা! আর শ্রমিক কর্মচারীদের ব্যাপারে আপনাদের বেশ উদাসীনতা! নিজেরা চুরি করে তার খেসারত দিতে কথায় কথায় কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ছাটাই করে তাদের পরিবার পরিজনকে পথে বসাতে আপনাদের একটুও বুক কাঁপে না! এতোটুকুও চিন্তা আপনাদের মাঝে নেই যে, মাঝ বয়সে একজন মানুষ তার পরিবার পরিজন নিয়ে কোন পথে হাটবে?
আপনাদের কাছে যাওয়ার মতো কথা বলার মতো যোগ্যতা আমাদের নেই, গেলেও সেটা আপনারা ভালো চোখে দেখবেন বলে মনে হয় না! কারন- নানান ভাবে আপনাদের কাছে যে কথাগুলো পৌঁছে তার প্রতিকার খুব কমই হয়! জানি এ দেশীয় কালচারে অনেক সীমাবদ্ধতা আপনাদের আছে তাই এভাবে বলতে হলো! এভাবে বলতে গেলে শত শত পৃষ্ঠা লেখা যাবে কিন্তু আপনাদের গুণকীর্তন শেষ হবে না! তাই আাজ আর লিখতে চাচ্ছি না!
হে কর্তৃপক্ষ, মালিক পক্ষ, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, এম.কম কর্তৃপক্ষ তথা বিরক্তিকর ও ক্ষতিকর পক্ষ, মনে রাখবেন সবার উপরে আছেন একমাত্র কেবলমাত্র শুধুমাত্র এক এবং অদ্বিতীয় এক পক্ষ, যিনি সর্বাবস্থায়ই নিরপেক্ষ “মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা”। আপনাদের বিচারের ভার তার হাতেই দিলাম।।
আমি জানি আমার এ লেখার জন্য আপনারা আমার অনেক ক্ষতিই করতে পারবেন (কোন উপকার করতে পারবেন না, এটা নিশ্চিত), তবুও লিখেছি, সামনে আরও লিখবো ইনশায়াল্লাহ্। আমার একজনের ক্ষতি হয়েও যদি এদেশের লক্ষ লক্ষ বীমা গ্রাহক, কর্মী, কর্মকর্তাদের কিছু না কিছু উপকার করতে পারি তবেই আমি তৃপ্ত!
পরিশেষে আশার গাছে জল ঢেলে বলতে চাই আপনাদের সু-মতি, সু-বিবেচনা, সু-বিচারে বীমা শিল্পের যুগোপযোগী পরিবর্তন করে বীমা পেশা একটি আস্থাভাজন পেশায় রূপান্তরিত হবে এটাই কাম্য।
এদেশের লক্ষ লক্ষ বীমা কর্মী পক্ষে- “একজন বিদ্রোহী বীমাকর্মী” (তারিখ-০৯/১২/২০২১)
লেখক: মোহাম্মদ এমরান, সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি), মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।